,

শায়েস্তাগঞ্জে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পোষ্ট মাষ্টার বরখাস্ত

সংবাদদাতা ॥ শায়েস্তাগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন ভারপ্রাপ্ত সাব-পোস্ট মাস্টার পীযূষ সূত্রধর। একমাস পর খবর পেয়ে ওই টাকা উদ্ধার করেন সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল। একই সাথে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাব পোস্ট মাস্টারের প্রতারণার ঘটনায় পোস্ট অফিস কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সাব-পোস্ট মাস্টার পীযূষ সূত্রধর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আব্দুল কাদির জানান, গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও একটি সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে তিনি নিজের কাছে ১০ লাখ টাকা রেখে দেন। পূণরায় সঞ্চয়পত্র করে দেয়ার কথা বলে তিনি এ টাকা ১ মাস নিজের কাছে রাখেন। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এরপর গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র না করে তিনি নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন। ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধর বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, ৩ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র করে দেয়ার কথা বলে টাকাগুলো তার কাছে রেখেছিলেন। কিন্তু একমাস পর অফিসার গিয়ে টাকাগুলো উদ্ধার করেছেন। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শায়েস্তাগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সাব-পোস্ট মাস্টার পীযূষ সূত্রধর জানান, টাকাগুলো গ্রাহক তার কাছে রেখে গিয়েছিলেন পুনরায় সঞ্চয়পত্র করার জন্য। এগুলো আমি রাখিনি। সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল চাওয়ামাত্রই আমি টাকাগুলো বের করে দিয়েছি। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ও ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩১শে জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বড়চর গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব শায়েস্তাগঞ্জ সাব পোস্ট অফিসে ‘তিন গ নং ০৯৯৫২৮৯’ এবং ‘তিন গ নং ০৯৯৫২৯০’ নম্বরে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করেন। ত্রৈমাসিক দু’টি সঞ্চয়পত্রই ৩ বছর মেয়াদি করা হয়। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় গত ৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি উক্ত সঞ্চয়পত্র দু’টি ভাঙ্গেন। গ্রাহক সঞ্চয়পত্রগুলো ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পীযূষ সূত্রধরের নিকট জমা দেন। পরে তিনি টাকা প্রাপ্তির ৫ লাখ টাকা করে দু’টি চূড়ান্ত রশিদে ওই গ্রাহকের স্বাক্ষর নেন। সাথে সাথে টাকা উত্তোলন করে তিনি পূণরায় ৩ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র করে দেয়ার কথা বলে এগুলো নিজের কাছে রেখে দেন। এর বিপরীতে গ্রাহককে একটি সাদা কাগজে ১০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন মর্মে স্লিপ দেন। যার আইনগত কোন বৈধতা নেই। এ সময় ওই গ্রাহককে বলে দেন প্রধান ডাকঘর থেকে বই এলে তার সঞ্চয়পত্র করা হবে। এরপর থেকে বেশ কয়েকদিন গ্রাহক সঞ্চয়পত্র হয়েছে কি-না খবর নিতে গেলে তিনি নানা টালবাহান শুরু করেন। একমাস পর বিষয়টি সন্দেহ হলে গত ৪ মার্চ গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব হবিগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে বইয়ের সংকটের বিষয়ে খবর নিতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে। প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার খবর দেন সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে। তিনি গিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান শায়েস্তাগঞ্জ থেকে গত দুই মাসে কোন সঞ্চয়পত্র জমা হয়নি। উপরন্তু ওই গ্রাহকের টাকাগুলো একমাস আগেই উত্তোলন করা হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ সাব পোস্ট অফিসে যান। সেখানে গিয়ে তদন্ত করে টাকা আত্মসাতের চেষ্টার সত্যতা পান। জিজ্ঞাসাবাদকালে পীযূষ সূত্রধর তার কাছে টাকা রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত রাতেই তিনি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে অশ্রেণী খাতে জমা দেন। একই সাথে সাব-পোস্ট মাস্টার পীযূষ সূত্রধরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর